শিখি বাংলায়

শিখি বাংলায় হলো একটি শিক্ষামূলক ব্লগ যা রচনা, ভাবসম্প্রসারণ, সারাংশ, সারমর্ম ও নানা শিক্ষা ও তথ্যের বিশাল সমাহার

11 April, 2019

বাংলা নববর্ষ / পহেলা বৈশাখ

বাংলা নববর্ষ / পহেলা বৈশাখ 
বাংলা নববর্ষ / পহেলা বৈশাখ
বাংলা নববর্ষ / পহেলা বৈশাখ


ভুমিকা : আদিকাল থেকে যেকোন বছরের প্রথম দিনটি 'নববর্ষ' নামে পরিচিত হয়ে আসছে৷ পৃথিবীর সর্বত্রই নববর্ষ একটি প্রচলিত সংস্কৃতি ধারা। পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন৷ চৈত্র মাসের শেষ দিনের সূর্যাস্তের পর রাতের শেষে নতুন সূর্য উদয়ের মধ্যে দিয়ে নতুন বছরের শুরু হয়। পুরাতন সমস্ত গ্লানি মুছে দিয়ে, পাওয়া না পাওয়ার হিসাব চুকিয়ে প্রতিবছর নতুন পসরা সাজিয়ে আগমন ঘটে নতুন বছরের । একটি বছরের হিসাব নিকাশ শেষ হলেই আরেকটি নতুন বছর শুরু হয়। বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতীর প্রাণে এক আনন্দধারা বইয়ে দেয়। নববর্ষের আগমনে দেশের সর্বত্রই বিরাজ করে এক উৎসব মুখর পরিবেশ। বাংলা নববর্ষ এখন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বজনীন এক জাতীয় উৎসব এ পরিনত হয়েছে৷ 

নববর্ষের পরিচয় : সৃষ্টির সুচনাকাল থেকেই পৃথিবী আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির ছন্দে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ছুটে চলেছে৷ আবার সূর্য তার গ্রহ উপগ্রহ নিয়ে এক মহাপরিক্রমায় ধাবমান। মানুষ তার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এই অনন্ত, অখন্ড মহাকালকে খন্ডিত করে চিহ্নিত করেছে সেকেন্ড-মিনিট-ঘন্টা-দিন-মাস-বছর। মিশরীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশ্বের প্রথম পঞ্জিকা সৃষ্টি করেন৷ প্রকৃতির স্বভাব লক্ষনই ছিল মানুষের বর্ষ গণনার উৎস। এই বর্ষ গণনার মধ্যে দিয়েই নববর্ষের সৃষ্টি হয়। 

নববর্ষের ইতিহাস : বাঙালি জাতির জন্ম ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস থেকে জানা যায়,এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ এলাকার সভ্যতা, সংস্কৃতি, লোকাচার, উৎসব ও পার্বণ সবই কৃষিকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। বাংলা সনের ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। 
বহু প্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশে নবান্ন উৎসব চালু রয়েছে৷ এ উৎসবের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলা সনের জন্মকথা। মোগল সম্রাট আকবর রাজকার্য সম্পাদনে হিজরি সাল নিয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হলে তিনি বাংলা সন সৃষ্টির নির্দেশ দেন। এই সন প্রবর্তন করা হয় কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে৷ তখন অগ্রহায়ণ মাসকে বাংলা সনের প্রথম মাস হিসেবে গণনা করা হতো। প্রচলিত হিজরি চান্দ্র সন ও বাংলা সৌর সনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সম্রাটের অর্থমন্ত্রী টোডরমলের নির্দেশনায় রাজজ্যোতিষী মাহাপন্ডিত আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী বাংলা সনের উদ্ভাবন করেন ১৫৮৫ সালের ১০ মার্চ। এরপর বহু পণ্ডিত ও গবেষকের মেধা- শ্রম ও প্রাজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে বাংলা সন বর্তমান রূপ লাভ করেছে। ১৯৬৮ সালে মনীষী ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এর নেতৃত্বে বাংলা সনের সংস্কার করা হয়। 

নববর্ষের গুরুত্ব : বাংলা সন শুরু হওয়া বাঙালির জীবনে একটি অসাধারণ ঘটনা। পহেলা বৈশাখ বছরের প্রথম দিন হওয়াটাও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাঙালির কর্মপ্রবাহে বাংলা নববর্ষের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বাঙালির জীবন যাত্রা, উৎসব অনুষ্ঠান, পালা-পার্বণ, হালখাতা, বিভিন্ন কর্ম সম্পাদন, খাজনা দেওয়া, দৈনন্দিন কাজকর্ম বাংলা সনের দিন তারিখ তিথি নক্ষত্র অনুসারে করা হয়। দৈনন্দিন কাজকর্মে খ্রিষ্টীয় সাল যতই ব্যাবহার করি না কেন  বাংলা সনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই কারণে আমরা ভুলে যাইনি পহেলা বৈশাখ, ২৫ এ বৈশাখ, ১১ ই জৈষ্ঠ্য ও ২২ এ শ্রাবণ। এছাড়া বাংলা নববর্ষ আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার শিক্ষা দেয়। 

বর্ষবরণ : বাঙালির জীবনে বাংলা সনের গুরুত্ব অপরিসীম। বাঙালি আজ কেবল গ্রামে -গঞ্জে নয়, শহরে -বন্দরে, রাজধানীতে নববর্ষ নিয়ে সসাংস্কৃতিক অনুষ্টানে মেতে ওঠে। বাংলা একাডেমিকে কেন্দ্র করে আশেপাশের জায়গাগুলোতে বৈশাখী মেলা বসে, চারুকলা ইন্সটিটিউটের ছাত্র ছাত্রীরা লোকজ চিত্রকলা এঁকে, লোকজ সাজে, হাতি, ঘোড়ার মুখোশ তৈরি করে, নানান সাজে, নানাভাবে বৈশাখী শোভাযাত্রা বের করে বাংলা সনকে বরণ করে নিতে। নববর্ষ বরণ করতে ভোর থেকে রবীন্দ্রসংগীতের মনোমুগ্ধকর গান নিয়ে রমনার বটমূলে সমবেত হয় 'ছায়ানট'। পহেলা বৈশাখের সকালে রমনার আশেপাশে ধ্বনিত হয় কবিগুরুর মর্মস্পর্শী বানী -' এসো এসো, এসো হে বৈশাখ '।  সারা দেশেই নববর্ষ কে বরণ করার বিভিন্ন প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। 

শহর ও গ্রামে নববর্ষ উদযাপন :  নববর্ষে পল্লি অঞ্চলের কোথাও কোথাও বর্ণাঢ্য মেলা বসে৷ মেলায় বিচিত্র আনন্দ অনুষ্টান, কেনাবেচার সাথে সাথে মানুষের মিলনের অমলিন খুশি, অবারিত প্রীতি স্পর্শে নববর্ষের বিশেষ দিনটি মুখর হয়ে ওঠে। এছাড়া দরিদ্র ভোজন, নৃত্য -গীত, সভা ও আনন্দ উৎসবে বছরের প্রথম দিনটি মুখরিত হয়।  পল্লির কোথাও কোথাও রচিত হয় নববর্ষ উদযাপন উৎসব -মঞ্চ, যেখানে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 
শহরাঞ্চলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অভিবাদন, শোভাযাত্রা, খেলাধুলায় নববর্ষের সূচনা হয়৷ 

নববর্ষ উদযাপনের বৈশিষ্ট্য : পহেলা বৈশাখে বাংলার মানুষ অতীতের সুখ- দুঃখ ভুলে গিয়ে নতুনের আহ্বানে সাড়া দেয়। প্রত্যহিক কাজকর্ম ছেড়ে ঘরবাড়ি ধুয়েমুছে পরিস্কার করে৷ আটপৌরে জামাকাপড় ছেড়ে নতুন পোশাক পরে৷ বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন দের সাথে দেখা করে এবং পানাহারে মেতে ওঠে৷ 
বাংলা নববর্ষের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো বৈশাখী মেলা। সারা দেশে এ মেলা বসে। মেলায় মূলত মৃৎ ও কুটির শিল্পজাত পণ্যাদির কেনাবেচা হয়। এ মেলা এক দিন থেকে শুরু করে সপ্তাহব্যাপী চলতে থাকে। এটি বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে প্রচলিত। 
বাংলা নববর্ষ কেবল সংস্কৃতির অংশ নয়, এর সাথে অর্থনীতি ও জড়িত। পহেলা বৈশাখ  ব্যবসায়ী মহলের হালখাতার দিন। বিগত বছরের বকেয়া টাকা এই সময় ক্রেতারা পরিশোধ করে থাকেন৷ 
নববর্ষ উপলক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে৷ এছাড়া পত্রিকাগুলোতে নববর্ষ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়। 

উপসংহার : বাংলা নববর্ষ আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের স্বাক্ষর বহন করে৷ রাজনৈতিক আন্দোলন তাতে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। এর সূচনা ষাটের দশকে। আইয়ুব আমলে রবীন্দ্রসংগীত ও বাঙালি সংস্কৃতির উপর আক্রমণ শুরু হলে সংগীত প্রতিষ্ঠান 'ছায়ানট' পহেলা বৈশাখে নববর্ষ পালনের জন্য রমনার বটমূলে আয়োজন করে রবীন্দ্র সংগীতের। সেই ধারা 'ছায়ানট ' আজও অব্যাহত রেখেছে। বাংলা নববর্ষের এটি একটি উল্লেখযোগ্য দিক৷ নববর্ষ আজ সত্যের গৌরবে,মঙ্গলের গৌরবে, মহত্বের গৌরবে সকলের জীবনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক -সেই প্রত্যাশা সকলের। বাংলা নববর্ষ হোক বাঙালির অনন্ত গৌরব৷

ছোট ছোট বালুকনা, বিন্দু বিন্দু জল......এ ধরায় স্বর্গ শোভা নিত্য দেয় আনি

ছোট ছোট বালুকনা, বিন্দু বিন্দু জল......এ ধরায় স্বর্গ শোভা নিত্য দেয় আনি 


ছোট ছোট বালুকনা, বিন্দু বিন্দু জল......এ ধরায় স্বর্গ শোভা নিত্য দেয় আনি । 

সারমর্ম : ক্ষুদ্র বলে কোন কিছুকে তুচ্ছ করতে নেই  ক্ষুদ্র থেকেই বৃহতের সৃষ্টি। বালিকনা নিয়ে মহাদেশ, বিন্দু বিন্দু জল নিয়ে মহাসাগর এবং ক্ষুদ্র মুহূর্ত গুলোর সমন্বয়ে যুগান্তকারী কাল গড়ে ওঠে। তেমনি সামান্য ত্রুটি বৃহৎ অনিষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পক্ষান্তরে, মহৎ কর্ম ক্ষুদ্র হলেও তা পৃথিবীকে স্বর্গময় করে তোলে৷

ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা....... তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে

ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা....... তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে


ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা,....... তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে । 


সারমর্ম : ক্ষমাশীলতা মানুষের মহৎগুণ হলেও ন্যায় এবং সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কঠোর হওয়া উচিত৷ অন্যায়কে সহ্য করা ও প্রশ্রয় দেয়া - দু'টোই সমান অপরাধ৷ সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের আপোষহীন মনোভাব থাকতে হবে৷

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর..... সন্দেহ নেই মাত্র

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর..... সন্দেহ নেই মাত্র
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর..... সন্দেহ নেই মাত্র


বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর..... সন্দেহ নেই মাত্র।


সারমর্ম : বিশ্বের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য থেকে মানুষ শিক্ষা লাভ করে। নিত্য নতুন প্রকৃতি থেকে অর্জিত হয় মানুষের অভিজ্ঞতা, বিশ্বের বুকে লুকিয়ে থাকা বিচিত্র রহস্য মানুষের জ্ঞানের উৎস।  সে শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে সমৃদ্ধ করা উচিত৷

10 April, 2019

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস / একুশের চেতনা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস / একুশে ফেব্রুয়ারি ও বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস / জাতীয় জীবনে একুশের চেতনা / আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য 


সূচনা
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি 
আমি কি ভুলিতে পারি।" 
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে এক গৌরবময় ও ঐঐতিহ্যবাহী দিন। বাঙালির জাতীয় জীবনের সকল চেতনার উৎস হচ্ছে এ দিনটি। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্টা করার ঐতিহাসিক দিন এটি। এদিনেই বাঙালির তাজা রক্ত রাজপথে ঝরেছিল। বাঙালির রক্তঝরা এ দিনটিকে সারা বিশ্বে স্মরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কো 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সম্মান জানিয়েছে ভাষা শহীদদের প্রতি। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
 আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

ভাষা আন্দোলনের আদি কথা : পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যবহিত পূর্বে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড: জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্টভাষা করার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। পূর্ব বঙ্গ থেকে ড: মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন  করেন (১১ শ্রাবণ, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ)।  এভাবে পাকিস্তান জন্মের আগেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা : এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান সৃষ্টির শুরু থেকেই উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার হীন চক্রান্ত চলতে থাকে। ১৯৪৮ সালে রেসকোর্স উদ্যানে মোহাম্মদ আলী জীন্নাহ ঘোষণা করেন, 'উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা '।  এর কিছু দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করলে তুমুল প্রতিবাদ ধ্বনি উচ্চারিত হয়। 

ভাষা আন্দোলন : মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ১৯৪৮ সালের ঘোষণার পর থেকেই বাংলা ভাষার আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানি ডিক্টেটরগণ যতই বাংলা ভাষার বিরোধিতা করতে থাকে,বাংলা ভাষার আন্দোলন ততই জোরদার হয়। প্রাথমিকভাবে ছাত্ররা এ আন্দোলন চালিয়ে নিলেও পরবর্তীতে গোটা দেশবাসী ছাত্রদের সাথে একাত্ম ঘোষণা করে।দেশবাসীর জোরালো সমর্থনে ছাত্রদের মনোবল আরো বেড়ে যায়, তারা দ্বিগুণ উৎসাহে সম্মুখপানে এগুতে থাকে। 

একুশের স্মৃতি : '৫২র ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনকে সামনে রেখে সমগ্র দেশে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে আন্দোলন জোরদার করা হয়। পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসক ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সকল প্রকার মিটিং মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানে প্রত্যয়ী ছাত্র সমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। সাথে সাথে পুলিশ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বার সহ আরো অনেকে নিহত হয়। এ হত্যাযজ্ঞ ও দমননীতির ফলে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। 

রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি : ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত মার্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের খবর সারা দেশে বিদ্যুৎবেগে পৌছে যায় এবং দেশবাসী প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।অত:পর পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালে সংবিধানে সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দেয়। 

আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি : একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়। প্রতি বছর 'একুশে ফেব্রুয়ারি ' সারা বিশ্বে পালিত হয় 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ' হিসেবে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো)  -এর সাধারণ পরিষদের ৩০ তম পূর্নাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশ সহ ২৭ টি দেশের সমর্থন নিয়ে সর্বসম্মতভাবে 'একুশে ফেব্রুয়ারি ' কে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ইউনেস্কোর প্রস্তাবে বলা হয়, "১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের অনন্য ত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ এবং ১৯৫২ সালের এই দিনের শহীদদের স্মৃতিকে সারা বিশ্বে স্মরণীয় করে রাখতে একুশে ফেব্রুয়ারি কে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর ১৮৮ টি সদস্য দেশ এবং ইউনেস্কোর সদর দপ্তর এ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হবে।" ইউনেস্কোর এ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বিশ্বে প্রায় ৫ হাজার ভাষা সম্মানিত হল এবং একবিংশ শতাব্দীর তথা দুই সহস্রাব্দের প্রথম অর্থাৎ ২০০০ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্ব ব্যাপী প্রথম পালিত হয় ' আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস '। 

স্বাধিকার চেতনা : ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির মধ্যে যে চেতনার উন্মেষ হয়, তার চরম বিস্ফোরণ ঘটে উনসত্তর থেকে একাত্তরে। একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য শহীদ দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি ; তা বাঙালির জাতীয় জীবনের সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের সমস্ত আআন্দোলনের মূল চেতনা একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশ থেকেই বাঙলি উপলব্ধি করেছিল তার বাঙালি জাতীয়তাবোধ, তার সংস্কৃতির অতন্দ্র প্রহরী  এই সংগ্রামী চেতনাই বাংলার সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং রাজনৈতিক আন্দোলন এ দুই ধারাকে একসূত্রে গ্রথিত করে মুক্তি সংগ্রামের মোহনায় এনে দিয়েছে। আর এর প্রেক্ষিতেই ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে। 

উপসংহার : বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত একুশে ফেব্রুয়ারি 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ' হিসেবে গৃহীত হওয়ার ব্যাপারটি আমাদের তথা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। কারণ, একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে বাঙালি জাতি আত্মমর্যাদার চেতনা লাভ করেছিল ; লাভ করেছিল মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের প্রেরণা এবং অনুভব করেছিল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা।

বাংলা নববর্ষ / পহেলা বৈশাখ

বাংলা নববর্ষ / পহেলা বৈশাখ  বাংলা নববর্ষ / পহেলা বৈশাখ ভুমিকা : আদিকাল থেকে যেকোন বছরের প্রথম দিনটি 'নববর্ষ' নামে পরিচিত...